গ্রামের কিশোর গ্যাং ও হারানো গুপ্তধন

 গ্রামের কিশোর গ্যাং হারানো গুপ্তধন

একদিন গ্রীষ্মের দুপুরে, শান্তিপুর গ্রামের চার বন্ধু - শুভ, রিয়া, আকাশ এবং মিতু - গ্রামের প্রান্তে থাকা পুরনো জমিদার বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল। বাড়িটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। জঙ্গলে ঘেরা, ভাঙা দেওয়াল আর আগাছার স্তূপ দেখে যে কেউ ভয় পেতে পারত, কিন্তু এই চারজনের মনে ছিল অদম্য কৌতূহল আর সাহস।


বাড়ির ভেতরে ঘুরতে ঘুরতে, শুভ পুরোনো একটি ডায়েরি খুঁজে পায়। ডায়েরিটির পাতা উল্টাতেই তাদের চোখ আটকে যায় একটি হাতে আঁকা নকশার উপর। নকশাটি আসলে গুপ্তধনের মানচিত্র! জমিদার বাড়ির পাশেই লুকানো আছে গুপ্তধন, এমনটাই লেখা ছিল ডায়েরিতে।


গুপ্তধনের কথা শুনে চারজনের চোখ চকচক করে ওঠে। তারা সঙ্গে সঙ্গেই গুপ্তধন উদ্ধারের অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেয়।

পরের দিন থেকেই শুরু হয় তাদের অভিযান। নকশা অনুযায়ী, প্রথমে যেতে হবে পুরনো দিঘির পাড়ে। দিঘির পাড়ে গিয়ে তারা দেখে, ঘন জঙ্গল আর সাপের আনাগোনা। কিন্তু তারা ভয় না পেয়ে লাঠি হাতে এগিয়ে যায়। জঙ্গলের মধ্যে তারা একটি পুরোনো পাথরের ফলক খুঁজে পায়, যেখানে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন খোদাই করা ছিল।


মিতু, যে ভালো ছবি আঁকে, সে চিহ্নগুলো খাতায় টুকে নেয়। তারপর চারজনে মিলে ইন্টারনেট থেকে সেই সাংকেতিক চিহ্নগুলোর মানে বের করার চেষ্টা করে। অবশেষে তারা জানতে পারে, চিহ্নগুলো আসলে একটি ধাঁধা। ধাঁধাটি সমাধান করলেই গুপ্তধনের দিকে এগোনোর রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে।

এদিকে, গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বর রফিক চাচা জানতে পারেন যে, কিশোররা জমিদার বাড়িতে গুপ্তধনের নকশা খুঁজে পেয়েছে। রফিক চাচা সবসময় গ্রামের গরিব মানুষদের শোষণ করতেন। তিনি ভাবলেন, গুপ্তধন পেলে তার ক্ষমতা আরও বাড়বে। তাই তিনি তার গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে কিশোরদের পিছু লাগালেন, যাতে যে কোনও মূল্যে গুপ্তধন তিনি একাই দখল করতে পারেন।

কিশোররা যখন ধাঁধা সমাধানের চেষ্টা করছে, তখন রফিক চাচার গুণ্ডারা তাদের তাড়া করে। শুভ, রিয়া, আকাশ আর মিতু কোনওমতে পালিয়ে বাঁচে। তারা বুঝতে পারে, এবার তাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।

পরের দিন, মিতু সাংকেতিক চিহ্নের মানে উদ্ধার করে। তারা জানতে পারে, গুপ্তধন লুকানো আছে জমিদার বাড়ির পেছনের বাগানে থাকা সবচেয়ে পুরনো আম গাছটির নিচে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানো সহজ ছিল না, কারণ রফিক চাচার লোকেরা সেখানেও নজর রাখছিল।

তখন আকাশ একটা বুদ্ধি বের করে। সে আর শুভ গ্রামের ছেলেদের সাথে মিশে রফিক চাচার বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলার নাম করে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাতে রফিক চাচার লোকেরা সেদিকে নজর দেয়। এই সুযোগে মিতু আর রিয়া পিছনের দরজা দিয়ে জমিদার বাড়িতে ঢুকে যায়।

পুরোনো আম গাছটির নিচে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করতেই তারা একটি পুরোনো সিন্দুক খুঁজে পায়। সিন্দুক খুলে তারা দেখে, সেখানে সোনার মোহর, রুপোর গয়না আর মূল্যবান রত্ন পাথর রয়েছে।

গুপ্তধন পেয়ে কিশোররা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। কিন্তু তখনই রফিক চাচা তার দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হয়। তিনি কিশোরদের কাছ থেকে গুপ্তধন কেড়ে নিতে চান।

কিন্তু কিশোররা এত সহজে হার মানার পাত্র নয়। রিয়া দ্রুত একটি বাঁশি বাজাতে শুরু করে, যা সে সবসময় সঙ্গে রাখত। বাঁশির আওয়াজ শুনে গ্রামের মানুষজন লাঠিসোঁটা নিয়ে জমিদার বাড়ির দিকে ছুটে আসে। রফিক চাচা বুঝতে পারে, তার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়। গ্রামের মানুষজন তাকে তাড়া করে গ্রাম থেকে বের করে দেয়।

কিশোররা সেই গুপ্তধন গ্রামের মানুষের ভালোর জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা গ্রামের গরিবদের জন্য একটি দাতব্য চিকিৎসালয় খোলে, একটি নতুন স্কুল তৈরি করে, আর গ্রামের রাস্তাঘাট মেরামত করায়।

তাদের এই সাহসিকতা আর বুদ্ধিমত্তার জন্য শান্তিপুর গ্রামের মানুষজন তাদের চিরকাল মনে রাখে। শুভ, রিয়া, আকাশ আর মিতু হয়ে ওঠে গ্রামের hero

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Ads

Ads